Restless Legs Syndrome (RLS)(রেস্টলেস লেগ সিন্ড্রোম)

Restless Legs Syndrome

 

Restless Legs Syndrome (RLS) আসলে কি?

(রেস্টলেস লেগ সিন্ড্রোম)

কিছু সময়ের জন্য ধরে নিন, আজ সারাদিন আপনি অনেক কাজ করেছেন এবং কাজ শেষ করে বাসায় ফিরে আয়েশ করে টেলিভিশনের সামনে বসে আপনার পছন্দের অনুষ্ঠানটি দেখছেন। কিন্তু আজ একটু অন্যরকম লাগছে! মনে হচ্ছে আপনি পায়ের মধ্যে অস্বাভাবিক কিছুর অনুভুতি পাচ্ছেন, যেটা এর আগে হয় নি কখনও। অনুভূতিটা এরকম হতে পারে যে, আপনার পায়ের ভিতরে হয়ত কোন ছোট পোকা হেটে যাচ্ছে অথবা অদৃশ্য কেউ একজন আপনার পায়ে সূচ দিয়ে খোঁচা দিচ্ছে অথবা পায়ের ভিতর জ্বালা পোড়া হচ্ছে। যদি আপনার সাথে এরকম কিছু একটা হয়, তাহলে প্রাথমিক ভাবে ধরে নিতে পারেন, আপনার এই কন্ডিশানটি Restless Legs Syndrome (RLS)।

আমরা যদি এর নামের দিকে খেয়াল করি, ‘Restless’ শব্দটির বাংলা প্রতিশব্দ হচ্ছে ‘বিশ্রামহীন’। অর্থাৎ, যদি এটাতে আক্রান্ত হন, ও আপনাকে বিশ্রাম নিতে দিবে না। যখুনি বিশ্রাম নিতে যাবেন, তখুনি সে চলে আসবে এবং আপনার বিশ্রামের ব্যাঘাত ঘটাবে। যখন আপনার পায়ে এরকম অনুভুতি হয় তখন এর থেকে রক্ষা পেতে নিশ্চয়ই নিজেই পা নাড়ানো শুরু করে থাকেন অথবা উঠে একটু হাঁটাহাঁটি করে থাকেন। যতক্ষণ পা নাড়ানো হয় অথবা উঠে হাঁটাহাঁটি করা হয়, ঠিক ততোক্ষণের জন্য আর অস্বাভাবিক অনুভুতি থাকে না। কিন্তু আবার যেই, একটু আয়েশ করে বসবেন, সে এসে আবার হাজির। RLS এর লক্ষণগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সন্ধ্যাতে এবং রাতে বেশি হয়ে থাকে। সাধারণত বসে অথবা শুয়ে বিশ্রাম নেয়া, টিভি দেখা, অনেক ক্ষেত্রে বিমান ভ্রমনের সময় হয়ে থাকে। রাতে শোয়ার সময়ও এর লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে।

কাদের RLS/WED হওয়ার সম্ভাবনা বেশি?
RLS যেকোনো বয়সের নারী পুরুষের হতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ৪৫ বছরের উপরের যেকোনো নারী পুরুষের হয়ে থাকে। তবে যে পরিবারে কোন এক সদস্যের RLS আছে, সেক্ষেত্রে সে পরিবারের অন্যান্য সদস্যের ৪৫ বছরের আগে RLS হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। পুরুষের চেয়ে নারীদের RLS বেশি হয়, সংখ্যাটা দ্বিগুন। মেয়েদের গর্ভধারণের সময় RLS বেশি হয়।

RLS কি একটি Sleep Disorder?
হ্যাঁ, RLS একটি অতি পরিচিত neurological sleep disorder. যদি আপনার RLS থেকে থাকে, তাহলে রাতে ভালো ঘুমাতে পারবেন না। কারণ, লক্ষণগুলো সেসময় আরও বেশি হয়ে থাকে। ঘুম ৫ ঘণ্টারও কম হয়, তাও আবার সেটা সঠিক ভাবে হয় না। দীর্ঘদিন এভাবে কম ঘুমানোর কারনে ব্যক্তি এবং কর্ম জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। যেমনঃ রাতে ভালো ঘুম না হওয়ার কারনে সারাদিন ঘুমঘুম ভাব হয়, কাজে মনোযোগ দেয়া যায় না। যারা Driving করেন তাদের জন্য আরও বেশি সমস্যার, অনেক দুর্ঘটনা হওয়ার কারণ RLS. যদি শুরুতে চিকিৎসা করা না হয়, তাহলে ধীরে ধীরে Insomnia ( অনিদ্রা অথবা নিদ্রাহীনতা) হওয়া খুব সম্ভব। যারা RLS এ আক্রান্ত তাদের মধ্যে প্রায় ৪০ ভাগ মানুষ Depression( বিষণ্ণতা) এবং Anxiety ( উদ্বিগ্নতা অথবা দুশ্চিন্তা ) তেও ভুগে থাকেন। ( তথ্যসূত্রঃ Restless Legs Syndrome Foundation)

Restless Legs Syndrome (RLS) এবং Periodic Limb Movement Disorder (PLMD) কি একই?
প্রাথমিক ভাবে RLS ও PLMD কে এক জিনিস ভেবে ভুল হয়ে থাকে, মনে রাখা দরকার কখনই RLS ও PLMD এক জিনিস নয়। দুটো আলাদা disorder.

কি কি কারনে আপনার RLS হতে পারে?
RLS হচ্ছে Idiopathic , সহজ করে বললে এর নির্দিষ্ট কারণ জানা যায় নি। তবে কিছু উল্লেখযোগ্য করণ হচ্ছেঃ
১. রক্তে লৌহের পরিমাণ কমে যাওয়া। যাকে Iron deficiency/ sideropenia/ hypoferremia বলা হয়ে থাকে। এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি কারণ।
২. Pregnancy ( মেয়েদের গর্ভধারণের সময় বেশি হয়ে থাকে, বিশেষ করে প্রথম তিন মাস। তবে বাচ্চা প্রশবের পর আর সমস্যাটি থাকে না)
৩. Genetics ( জীন ঘটিত কারণ। পরিবারের কারও থাকলে, অন্যদের হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি)

৪. মাদক( Alcohol) ও অধিক পরিমানে caffeine গ্রহণ করা;
৫. Perkinson’s disease (PD) { স্নায়ুতন্ত্রের একটি disorder. The medical journal of the American Academy of neurology র তথ্য মতে, যাদের PD আছে, তারা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে RLSও ভুগে থাকেন) ;
৬. Diabetes ( রক্তে glucose এর পরিমাণ বেড়ে যাওয়া) ;
৭. Varicose Vein (পায়ের Vein অর্থাৎ শিরা ফুলে বড় হয়ে যাওয়া ) ;
৮. Rheumatoid Arthritis (দীর্ঘমেয়াদি autoimmune disorder, যাতে প্রাথমিক ভাবে হাড়ের সংযোগ (joint) আক্রান্ত হয়ে থাকে ) ;
৯. Kidney disease or kidney failure;
১০. Peripheral Neuropathy (সাধারণত Peripheral Nerve এর damage এর কারনে হয়ে থাকে)
১১. কিছু Drugs এর কারণেও RLS হতে পারে। যেমনঃ antinausea drugs, antipsychotic drugs, antidepressants এবং কিছু cold ও allergy medications এর কারণেও হতে পারে……ইত্যাদি

Nocturnal Legs Cramps (NLC) ও Restless Legs Syndrome (RLS) এর মাঝে কি পার্থক্য? 
RLS এবং NLC এক নয়। পার্থক্য গুলো হচ্ছেঃ
**RLS এর ক্ষেত্রে, পা নাড়ালে অস্বাভাবিক অনুভূতি থেকে সাময়িক সময়ের জন্য রক্ষা পাওয়া যায়। কিন্তু, NLC এর ক্ষেত্রে পায়ে খিঁচুনি হওয়ার কারণে আপনি পা কোনভাবেই সোজা করতে পারবেন না। খিঁচুনি থামার পরে, আপনি পা সোজা করতে পারবেন।
**RLS এর ক্ষেত্রে অতটা ব্যথা অনুভব করা যায় না, যতটা NLC এর ক্ষেত্রে হয়। RLS এর ক্ষেত্রে পায়ে অস্বাভাবিক অনুভূতি হয়।

RLS এর রোগনির্ণয় এবং চিকিৎসা কি হতে পারে?
প্রথমত, যদি আপনি উপরে বর্ণিত লক্ষণ গুলো আপনার ক্ষেত্রেও দেখতে পারেন, তাহলে দেরি না করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তার এর সাথে যোগাযোগ করুন। অনেক মানুষ প্রথমে এগুলকে তেমন গুরুত্ব দিতে চান না, মনে করে থাকেন এটা তেমন কিছু না। এটি একটি ভুল সিদ্ধান্ত, যা আপনাকে পরে অনেক ভুগিয়ে থাকে। যখন ডাক্তার এর কাছে যাবেন, তখন ডাক্তার আপনার রক্তের Iron (ferritin) level এর টেস্ট এবং প্রয়জনে আরও কিছু টেস্ট দিতে পারেন । এমনকি lab এ আপনার ঘুমের পরীক্ষা করাও লাগতে পারে। রোগ নির্ণয় এর পর ডাক্তার আপনাকে কিছু medicine prescribe করে থাকবে।

কি কি পদক্ষেপ নিলে আপনার RLS হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়?
আগে থেকে একটু সাবধান হলেই RLS হওয়ার ঝুকি কমে যায়। এক্ষেত্রে আপনি যা যা করতে পারেনঃ
1. মাদক গ্রহণ সেবন থেকে বিরত থাকবেন এবং কম পরিমানে caffeine গ্রহণ করতে হবে। যেমনঃ চা, কফি, চকোলেট, soft drinks;
1. প্রতিদিন ব্যায়াম করতে হবে। যারা নিয়মিত ব্যায়াম করে তাদের RLS হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম;
2. হাল্কা গরম পানি দিয়ে গোসল করবেন আর পা massage করবেন;
3. পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে, বিশেষ করে যেগুলোতে Iron থাকে।যেমনঃ গরুর কলিজা, হার্ট, মস্তিষ্ক, বৃক্ক/কিডনী, লাল মাংস, মাছ, শাকসবজি, কুমড়োর বীচি ইত্যাদি।

আজ এতটুকুই, ধৈর্য সহকারে লিখাটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

(**Restless Legs Syndrome (RLS) টি Willis-Ekbom Disease (WED) নামেও পরিচিত, এর কারণটা হচ্ছে সর্বপ্রথম Sir Thomas Willis এই Syndrome টি নিয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছিলেন।)

 

লেখকঃ আকিব নিয়াজ জোহা
JINZHOU MEDICAL UNIVERSITY (CHINA)

Photo by Nick Miller on Unsplash

**References:

Web Link: www.Webmd.com

www.mayoclinic.com

www.rls.org

www.nhs.org

www.medicinenewstoday.com

www.medicinenet.com

www.sleepeducation.org and so on

YouTube: Pharmacy Trust.com

DW English

Healthguru

And also: National Sleep Foundation

Restless Legs Syndrome Foundation

American Academy of Neurology

Wikipedia

Related posts

Leave a Comment