যতই বাস্তবতার মুখোমুখি হচ্ছি ততই হতাশার গভীরে ডুবে যাচ্ছি

হতাশার

যতই বাস্তবতার মুখোমুখি হচ্ছি ততই হতাশার গভীরে ডুবে যাচ্ছি

সমস্যা:

আসসালামু আলাইকুম।

আমি অনার্স ২য় বর্ষের একজন শিক্ষার্থী। পড়ালেখায় খুব একটা খারাপ না। তবে যেভাবে আমি এখন চলছি তাতে খারাপ হতে হয়ত বেশি সময় লাগবেনা।

ছোট বেলা থেকে স্বপ্ন দেখতাম লাইফে বড় কিছু হব। ইন্টারনেশেনাল পর্যায়ে যাব।
তবে যতই বাস্তবতার মুখোমুখি হচ্ছি ততই হতাশায় ডুবে যাচ্ছি।

কারণ আমি আমার আশানুরূপ লক্ষে পৌঁছাতে পারছিনা। সারাক্ষণই কোনো না কোনো চিন্তায় ডুবে থাকি।বেশির ভাগ সময় হতাশা কিংবা ডিপ্রেশনে ভুগি।

এটা ইদানীংকালে খুব বেড়ে যাচ্ছে। আর স্বাধীনতা আমার অনেক পছন্দ।সবসময় স্বাধীন ই ছিলাম। তবে ইদানীং যে ভয়টা সব থেকে বেশি কাজ করে,সেটা হচ্ছে বিয়ে।
বিয়ে ব্যাপারটা খুব ভাবায় আমায়। বাবা মার বয়স হয়েছে হয়ত অনার্স কমপ্লিট করলেই বিয়েতে জোর করবে।তবে আজকালকার অবস্থা, আশে পাশে মানুষের অবস্থা থেকে যতদূর দেখি

ম্যাক্সিমাম ক্ষেত্রে দাম্পত্য জীবনে কলহ ঝগড়া ইত্যাদি নানা সমস্যা লেগে থাকে।
আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শ্বশুরঘর থেকে এনাফ সাপোর্ট আর স্বাধীনতা পাওয়া যায় না।

আর ডিভোর্স এটা সেটা নানা সমস্যা তো আছেই।

এমন না যে আমি বিয়ে কখনোই করব না, তবে আমি চাই আগে নিজে স্বাবলম্বী হই। অন্তত নিজের খরচটা যাতে নিজে চালাতে পারি।
তবে কোনো ভাবেই সেটাতে সফল হতে পারছিনা। ফলে একদিকে দুশ্চিন্তা যেমন বাড়ছে,সাথে হতাশাও। আর ব্যাক্তিগত /পারিবারিক কম বেশি সমস্যা তো সবারই আছে।

বেশিরভাগ সময় এখন বিষন্নতায় ভুগি। মানুষজন কে খুব বিরক্ত লাগে। কারো সাথে খুব বেশি কথা বলিনা।

বিশেষ করে নিজের সমস্যা গুলো কারো সাথে শেয়ার করিনা। করতে ইচ্ছে হয়না। নিজেকে আমি অনেক আশাবাদী একজন বলে দাবী করি কিন্তু কেন জানি আজকাল সেটা আগের মত থাকেনা।

সব কিছু নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করতে গিয়ে পড়ালেখায় দিন দিন পিছিয়ে পরছি। চাইলেও মন বসাতে পারছিনা আগের মত। আগে যে কাজগুলো করে নিজেকে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত রাখতাম ওগুলোও কেন জানি এখন আর কাজ দেয় না।

নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস টা দিন দিন কমে যাচ্ছে।
আমি এই ব্যাপার গুলো থেকে বের হয়ে আসতে চাই।

আগের মত নতুন উদ্যমে কাজে আর পড়ালেখায় মনোনিবেশ করতে চায়।

নিজের মত চেষ্টা আমি চালিয়ে যাচ্ছি,তবে আপনাদের সহযোগিতা হয়ত আমার পথকে আরো সুপ্রসস্ত করে দিবে।

ধন্যবাদ।
নাম গোপন রাখলে কৃতজ্ঞ থাকব।

 

পরামর্শ:

তুমি ছেলে না মেয়ে তা উল্লেখ করোনি। সবাইকে বলছি নিজের লিঙ্গ পরিচয় ও বয়স জানানো প্রয়োজন সঠিক পরামর্শ দেওয়ার জন্য।

তবে তোমার সমস্যার ধরন দেখে মনে হচ্ছে তুমি মেয়ে হতে পারো। বিয়ে নিয়ে তোমার উদ্বেগের ধরন দেখে এই অনুমান করছি।

যাহোক,তুমি ছোট বেলা থেকে উচ্চাশা পোষন করে আসছো- তোমার ভাষায় ইন্টারন্যাশনাল পর্যায়ে যাবো। উচ্চাশা থাকা ভালো তবে পরবর্তীতে জীবন বাস্তবতার সঙ্গে তাকে খাপ খাইয়ে নিতে হয়। কেননা জীবন বাস্তবতা কঠিন ও জটিল। তেমনটি না হলে ব্যর্থতার ছোবলে বার বার ক্ষতবিক্ষত হতে হয় এবং তোমার ভাষায় হতাশা বিষন্নতা পেয়ে বসে।

এ জন্য তুমি লিখেছো যতই বাস্তবতার মুখোমুখি হচ্ছি তত হতাশায় ডুবে যাচ্ছি।

এরকমটি শুধু তোমার ক্ষেত্রে নয়,অনেকের বেলায়ই সত্য।
তোমাকে দিনে দিনে পরিপক্ব হতে হবে,জীবন জগতের বাস্তবতা মেনে নিতে হবে ও সে অনুযায়ী জীবনকে সাজাতে হবে। তুমি আরেকটি বিষয়ে উদ্বিগ্ন – তা হচ্ছে ভবিষ্যৎ বিয়ে নিয়ে দুঃশ্চিন্তা।হয়তো তোমার পরিবার ও আশেপাশে দেখেছো দাম্পত্য কলহ,ঝগড়া এমনকি ডিভোর্স প্রায়ই হচ্ছে। এ ধরনের আগ বাড়িয়ে দুঃশ্চিন্তা করার কোন মানে হয় না।

কেননা প্রত্যকের জীবন আলাদা,বাস্তবতা ও আলাদা। তোমার ক্যারিয়ার এর ক্ষেত্রে যেমন বাস্তব ভিত্তিক এডজাস্টমেন্ট করে নিতে হবে,বিবাহিত জীবনেও সমজোতা ও দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।কে বা কারা অসুখী সেটি না দেখে জীবনকে দেখবে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে।

জীবনকে নিজের মতন করে সহজ করে নাও,বাস্তবতার মানদন্ডে সাজিয়ে নাও,
দেখবে জীবন তত কঠিন,ভারবহ কিছু নয়।

জীবন অনেক উপভোগ্য, অনেক বর্নিল ও সম্ভাবনাময়। বি পজিটিভ বি হ্যাপী

হতাশার

প্রফেসর তাজুল ইসলাম

 

Photo by Ian Espinosa on Unsplash

Related posts

Leave a Comment