শিশুদেরও হতে পারে মানসিক রোগ

মানসিক রোগ

শিশুদেরও হতে পারে মানসিক রোগ

 

আমাদের সমাজে প্রায় অধিকাংশেরই ধারণা যে. মানসিক রোগ মানেই বড়দের রোগ বা প্রাপ্ত বয়ষ্কদের রোগ। কিন্তু বড়দের মতো শিশুদেরও মানসিক রোগ হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে, বিশ্বের প্রায় ২০ শতাংশ শিশু-কিশোর মানসিক রোগে আক্রান্ত। আমাদের দেশের পরিসংখ্যানেও প্রায় এর কাছাকাছি ফলাফল পরিলক্ষিত হয়েছে। জন্মগত, পরিবেশগত, সামাজিক, জৈবিক ইত্যাদি কারণের প্রভাবে শিশুদের মধ্যে বিভিন্ন ধরণের মানসিক রোগ দেখা যায়। শিশুদের মানসিক রোগের মধ্যে সাধারণ উদ্বেগজনিত রোগ (Generalized Anxiety Disorder), স্কুলভীতি (School Phobia), বিশেষ কিছুতে ভীতি (Specific Phobia), আঘাত পরবর্তী চাপজনিত রোগ (Post-traumatic Stress Disorder), শুচিবায়ুগ্রস্থতা (Obsessive-Compulsive Disorder), রুপান্তরিত রোগ (Conversion Disorder), বিষন্নতা (Depressive Disorder), সিজোফ্রেনিয়া (Schizophrenia), খাদ্যাভাসজনিত রোগ (Eating Disorder), নিদ্রাজনিত রোগ (Sleep Disorder), অমোযোগীতা ও অতিচঞ্চলতা (ADHD), আত্মমগ্নতা বা বহির্বিমূখিতা রোগ (Autism Spectrum Disorder), বুদ্ধিহীনতা (Intellectual Disability), মাদকাসক্তি (Substance Use Disorder) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

শিশুদের মানসিক রোগ চিকিৎসায় একটি বড় বাধা হলো তারা ঠিকমতো নিজেদের সমস্যার কথা বলতে পারে না। শিশুরা তাদের সমস্যার কথা কতটুকু ঠিকভাবে বলতে পারছে সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিশুরা যেহেতু তাদের নিজেদের সমস্যা সঠিকভাবে বুঝতে পারে বা প্রকাশ করতে পারে না তাই অভিভাবক ও শিক্ষকদেরকে শিশুদের সার্বিক যে বিষয়গুলোর দিকে গুরুত্ব দিতে হবে তা হলো –

  • ১৫ দিন বা এর বেশী সময় যাবৎ কোনো শিশু বাসায় ও স্কুলে মন খারাপ করে আছে কিনা বা একা একা থাকছে কিনা,
  • কোনো কারন ছাড়াই ভয় পাচ্ছে কিনা কিংবা বিশেষ কিছু এড়িয়ে চলছে কিনা,
  • একই কাজ বার বার করছে কিনা,
  • হঠাৎ কোনো আচরণগত পরিবর্তন হয়েছে কিনা যেমন অতিরিক্ত উত্তেজিত হওয়া, মারামারি করা, ভাংচুর করা, নিজেকে আঘাত করা ইত্যাদি,
  • অতিরিক্ত কথা কিংবা অস্বাভাবিক কথা বলছে কিনা,
  • পড়ালেখাসহ ষেকোনো কাজে বয়সের তুলনায় দক্ষতা কম কিনা,
  • কোনো শিশুর কারো সাথে এমনকি সমবয়সীদের সাথেও মিশতে সমস্যা হচ্ছে কিনা,
  • ষেকোনো পরিবেশে মাত্রাতিরিক্ত চঞ্চল অথবা অমোযোগী কিনা,
  • হঠাৎ খাবারে অরুচি ও স্বাস্থ্যহীনতা হচ্ছে কিনা,
  • ঘুমের সমস্যা হচ্ছে কিনা বা ঘনঘন দুঃস্বপ্ন দেখছে কিনা,
  • শারীরিক কোনো কারণ ছাড়াই ঘনঘন মাথাব্যাথা, পেট ব্যাথা বা শ্বাসকষ্ট জাতীয় উপসর্গ হচ্ছে কিনা,
  • অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার প্রবণতা আছে কিনা,
  • কোনো কিছুতে আসক্ত হয়ে পড়ছে কিনা ইত্যাদি।

কিন্তু বেশীর ভাগ সময়ই দেখা যায় শিশুর এসব উপসর্গ বাবা-মা বুঝতে পারেন না বা গুরুত্ব দেন না। অনেক ক্ষেত্রে বুঝতে পারলেও মানসিক রোগ বলে মেনে নিতে চান না এবং মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যেতেও চান না। এটাও দেখা যায় যে, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ শিশুটিকে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে বললেও কিংবা মানসিক রোগ বিভাগে চিকিৎসা নেবার পরামর্শ দিলেও বাবা-মা তা অগ্রাহ্য করেন।

আবার অনেক সময় বিপরীত চিত্রটাও দেখা যায় – শিশুর কোনো মানসিক রোগ নেই কিন্তু অতি সচেতন বাবা-মা শিশুর আচরণে সামান্যতম পরিবর্তন দেখলেই মানসিক রোগ আছে ধারণা করে চিকিৎসা নিতে চান। শিশুর আচরণে সমস্যা মানেই যে তার মানসিক রোগ তা নাও হতে পারে। সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে এবং তা শিশুর পড়ালেখাসহ অন্যান্য ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক কাজে ব্যাঘাত ঘটালে অবশ্যই তা গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে এবং তাকে চিকিৎসার আওতায় আনতে হবে।

 

ডা. সুস্মিতা রায়
সহযোগী অধ্যাপক, মানসিক রোগ বিভাগ,

জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ, সিলেট।

Related posts

One Thought to “শিশুদেরও হতে পারে মানসিক রোগ”

Leave a Comment