শিখে নিন রক্তচাপ মাপার কৌশল …।

শিখে নিন রক্তচাপ মাপার কৌশল …।

 

বিপদ বলে কয়ে আসে না । হাতের কাছেও সব সময় ডাক্তার পাবেন না । প্রয়োজনীয় কিছু কাজ আপনাকেও করতে হতে পারে বা করা উচিৎ , এতে অনেক সময় অনেক বড় বিপদ থেকেও বেঁচে যাওয়া যায় । জীবন রক্ষা করা যায় । অথবা ছোটো খাটো সমস্যা আপনিও সামলাতে পারেন । অনেক কারণেই আপনার বা আপনার পরিবারের যে কারোর প্রেশার (রক্তচাপ) বেড়ে বা কমে যেতে পারে। আপনি যদি তাৎক্ষনিক প্রেশার টা মাপতে পারেন তাহলে তার জীবন ও রক্ষা হতে পারে । তাছাড়া উচ্চ রক্তচাপ একটি নীরব ঘাতক। নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করে আমরা আগে থেকেই তা শনাক্ত করতে পারি বা উচ্চ রক্ত চাপ জনিত জটিলতা থেকে রক্ষা পেতে পারি । আজকে আমরা কী করে প্রেশার মাপতে হয় তা শিখবো ।

রক্তচাপ নির্ণয় করার অপরিহার্য অংশ রক্তচাপমাপোমান যন্ত্র বা (বিপি মেশিন)।ইংরেজিতে বলা হয় স্ফিগমোম্যানোমিটার (sphygmomanometer)। বেশীর ভাগওষুধের দোকানেই রক্তচাপ মাপার এ যন্ত্রটি পাওয়া যায় । রক্তচাপ মাপার জন্য রক্তচাপমান যন্ত্র ছাড়া একটি স্টেথোস্কোপ দরকার হয়। অনেকে ডিজিটাল যন্ত্রও ব্যবহার করেন। তবে ডিজিটাল যন্ত্রের দাম বেশী এবং ঠিকমতো ব্যবহার না করলে রিডিং-এ গড়মিল হতে পারে।

একজন মানুষের রক্তচাপ প্রতি মুহূর্তেই পরিবর্তিত হয়। শ্বাস-প্রশ্বাস, মানসিক উত্তেজনা, ব্যায়াম, সিগারেট, অ্যালকোহল, উষ্ণতা, খাবার-দাবার এসব নানা কারণে রক্তচাপ ওঠানামা করে। এজন্য কারও রক্তচাপ মাপার আগে তাকে স্বাভাবিক থাকা উচিত।
রক্তচাপ মাপার জন্য চাপবিহীন অবস্থায় রক্তচাপ মাপার যন্ত্রের কাফ-এর নীচের প্রান্ত কনুইয়ের সামনের ভাঁজের ২.৫ সেঃ মিঃ ওপরে ভালোভাবে আটকাতে হয়। কনুইয়ের সামনে হাত দিয়ে ব্রাকিয়াল ধমনীর অবস্থান স্থির করে তার ওপর স্টেথো স্কোপের ডায়াফ্রাম বসানো হয়। ডায়াফ্রাম এমনভাবে চাপ দেওয়া উচিত যেন ডায়াফ্রাম এবং ত্বকের মাঝখানে কোন ফাঁক না থাকে।

চাপ মাপার সময় স্টেথোস্কোপ কাপড় কিংবা কাফের ওপরে রাখা যাবে না।রক্ত চাপমান যন্ত্রের ঘড়ি হৃদপিণ্ডের একই তলে অবস্থান করতে হবে। এরপর রেডিয়াল ধমনী অনুভব করা হয় এবং ধীরে ধীরে চাপমান যন্ত্রের চাপ বাড়ানো হয়। রেডিয়াল পালস বন্ধ হওয়ার পর চাপ ৩০ মিঃ মিঃ ওপরে নেওয়া হয়।

তারপর আস্তে আস্তে চাপ কমানো হয়। প্রতি বিটে সাধারণত ২ মিঃ মিঃ চাপ কমানো হয়। তাড়াতাড়ি চাপ কমালে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। | এবার চাপ কমানোর সময় স্টেথো স্কোপ দিয়ে ব্রাকিয়াল ধমনীতে সৃষ্ট শব্দ মনোযোগের সঙ্গে শোনা হয়। চাপ কমতে শুরু করলে রক্ত চলাচলের ফলে এক ধরণের শব্দ সৃষ্টি হয়। একে করটকফ শব্দ(Korotkoff sound) বলা হয়। করটকফ শব্দ ধাপে ধাপে পরিবর্তন হয়। এই শব্দের ধরন অনুসারে পাঁচটি পর্যায় রয়েছেঃ

পর্যায়-১ প্রথমে এক ধরণের তীক্ষ্ণ শব্দের সৃষ্টি হয়। এটা সিস্টোলিক রক্তচাপ নির্দেশ করে।
পর্যায়-২ উঁচু ঝির ঝির (Swishing) শব্দ।
পর্যায়-৩ নিচু পরিষ্কার শব্দের সঙ্গে সামান্য ঝির ঝির শব্দ।
পর্যায়-৪ এ পর্যায়ে শব্দের তীক্ষ্ণতা কমে আসে (Muffling) ।
পর্যায় -৫ এ সময়ে করটকফ শব্দ থেমে যায়।

করটকফ শব্দের প্রথম পর্যায়ে যে শব্দ শোনা যায় সেটাই সিস্টোলিক রক্তচাপ। সিস্টোলিক রক্তচাপ সম্পর্কে একমত হলেও ডায়াস্টোলিক রক্তচাপের ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেন চতুর্থ ধাপে যেখানে শব্দের তীক্ষ্ণতা কমে যায় (Muffling) সেটাই ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ। আবার অনেকের মতে পর্যায়-৫ অর্থাৎ যে চাপে শব্দ বন্ধ হয়ে যায় সেটাই ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ। তবে আজকাল অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ শেষের পরিমাপটিকে ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ হিসেবে গ্রহণ করে থাকেন।

এক কথায় শব্দ যখন শুরু হবে সেটা সিস্টোলিক এবং শব্দ যখন শেষ হবে সেটা ডায়াস্টোলিক ।

রক্তচাপের পর্যায় – সিস্টোলিক রক্তচাপ /ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ
(মিঃ মিঃ পারদচাপ)

 

রক্তচাপের প্রকারভেদ-

 

স্বাভাবিক < ১২০ এবং ১৬০ অথবা > ১০০ (মিঃ মিঃ পারদচাপ)

সিস্টোলিক এবং ডায়াস্টোলিক রক্তচাপের পর্যায় ভিন্ন হলে সর্বোচ্চ পর্যায়কেই গণনায় নিতে হবে। যেমন কারও রক্তচাপ ১৭০ / ৯৫ মিঃ মিঃ পারদ চাপ হলে তাকে পর্যায় – ২ হিসেবে গণনা করতে হবে এবং সেই মোতাবেক চিকিৎসা দিতে হবে।
রক্তচাপ যাই হোক না কেন, হৃদপিন্ডের অবস্থা কিংবা অন্যান্য টার্গেট অর্গানের পরিস্থিতি বুঝে নির্ধারিত সময়ের আগেও চিকিৎসা শুরু করতে হতে পারে । বয়স ভেদেও রক্ত চাপের ভিন্নতা রয়েছে ।

ধন্যবাদ । এখন আপনি নিজেই বাসায় রক্তচাপ মাপুন ।

ডাঃ এম এম রহমান রাজীব

Related posts

Leave a Comment