নৈতিক শিক্ষা দেওয়া হোক পরিবার থেকেই

নৈতিক শিক্ষা

 

নৈতিক শিক্ষা দেওয়া হোক পরিবার থেকেই ।

 

আমাদের বিয়ে ঠিক হয়েছে। আমি ওর সাথে কথা বলার সময় প্রায়ই বাচ্চাকাচ্চার প্রসঙ্গ চলে আসতো। যেহেতু দুজনই বাচ্চা পছন্দ করতাম তাই আমাদের প্ল্যান ছিলো বিয়ের এক বছরের মধ্যেই বাচ্চা নিবো। আমি মাঝেমধ্যে ওকে বলতাম, মেয়ে বাচ্চা চাই। কারণ মেয়ে বাচ্চা আমার খুব পছন্দ। আমার মেয়েকে আমি রাজকন্যা বানিয়ে রাখবো।

কিন্তু সে বলতো, ওর শুধু ছেলে বাচ্চা চাই।

আমি জিজ্ঞেস করলাম, আমাদের মেয়ে বাচ্চা হলে সমস্যা কি?

মুখটা গম্ভীর করে সে জবাব দিলো, একটা মেয়েকে পথেঘাটে, বাসে, মার্কেটে এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও যৌন হয়রানির স্বীকার হতে হয়। কোনো জায়গাতেই মেয়েরা নিরাপদ না। আমি নিজে কতটা হয়রানির স্বীকার হয়েছি তুমি জানোনা। আমি চাইনা আমার মেয়ে এসব সমস্যার মুখোমুখি হোক। মা হয়ে মেয়ের সেই অবস্থা আমি সহ্য করতে পারবোনা।

প্রেমিকার মুখে এসব কথা শুনে আমি খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম। এতদিন পত্রিকায়, টিভি নিউজে মেয়েদের যৌন হয়রানির খবর দেখেছি। এরকম নিউজ দেখায় অভ্যস্ত ছিলাম বলে এসব ঘটনা নিয়ে সিরিয়াসলি ভাবিনি। কিন্তু প্রেমিকার মুখে ওর নিজের হয়রানি হওয়ার ঘটনা শুনে নিজেকে খুব অসহায় মনে হলো। একটা মেয়ে কতটা টেনশন আর উৎকণ্ঠা নিয়ে রাস্তায় চলাফেরা করে তা উপলব্ধি করলাম।

আমার মেয়ে বড় হলে তাকে যৌন হয়রানির স্বীকার হতে হবে, আমি এটা মেনে নিতে পারবোনা। তাই আমি এখন মেয়ে সন্তান নেওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি। যেদিন এই সমাজ মেয়েদের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ হবে সেদিন মেয়ে সন্তান নেওয়ার কথা ভাববো।

আমার ছেলে সন্তান হলে তাকে নৈতিক শিক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি যৌন শিক্ষা দেওয়াও আমার দায়িত্ব হবে। আমার ছেলেকে বুঝাতে হবে, প্রচণ্ড গরমে তুমি শার্ট খুলতে পারলেও মেয়েরা ওড়নাটাও খুলতে পারেনা। একটা মেয়ের মনে সবসময় ইজ্জতের ভয় থাকে। তোমার মা ও এর ব্যতিক্রম নয়।

ছেলেটা একদিন বড় হয়ে মোবাইল, ইন্টারনেট ব্যবহার শিখবে। বন্ধুবান্ধবের পাল্লায় পড়ে পর্ণ মুভি দেখায় আসক্ত হতে পারে। তাকে বুঝাতে হবে, পর্ণ মানে যৌন বিকৃতি। পর্ণ দেখলে তোমার সুস্থ চিন্তাভাবনার বিকৃতি ঘটবে। তোমার মনে আজেবাজে খেয়াল আসবে। সুতরাং, কখনোই পর্ণ দেখবেনা।

ছেলেটা খেয়াল করতে পারে, তার মেয়ে সহপাঠী মাসের কিছু নির্দিষ্ট দিনে ক্লাসে উপস্থিত থাকেনা। কৌতূহলী হয়ে সে বন্ধুদের কাছে ব্যাপারটা জিজ্ঞেস করতে পারে। বন্ধুরা তখন পিরিয়ড সম্পর্কে ছেলেটাকে বিকৃত কথাবার্তা বলবে। মেয়েদের পিরিয়ড নিয়ে ঠাট্টাতামাসা করবে। বন্ধুদের কাছে জানার আগেই ছেলেকে পরিবার থেকে পিরিয়ড ব্যাপারটা পুরোপুরি বুঝাতে হবে। বুঝাতে হবে, একটা মেয়ে শুধুমাত্র সন্তান ধারণের জন্য মাসের কয়েকটা দিন অসহনীয় ব্যথা সহ্য করে। এটা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ঘটনা। তোমার মায়ের পিরিয়ড না হলে তোমার জন্মই হতোনা। সুতরাং পিরিয়ড নিয়ে ঠাট্টাতামাসা করার আগে তোমার মায়ের কথা ভাববে।

ছেলেকে বুঝাতে হবে, বিয়ের আগে শারীরিক মেলামেশা হারাম। কোনো মেয়ের দিকে খারাপ দৃষ্টিতে তাকানো হারাম। কোনো মেয়ে কিরকম পোশাক পড়লো, কিভাবে চলাফেরা করলো সে ব্যাপারে তোমার কথা বলার অধিকার নাই। কোনো মেয়েকে কোথাও অসহায় অবস্থায় দেখলে তোমার দায়িত্ব হবে তাকে বাসায় পৌছে দেওয়া।

তোমার মা যেমন একজন নারী, ঠিক তেমনি অন্য কোনো মেয়েও একজন নারী। তোমার মাকে যেভাবে সম্মান করো, ঠিক সেভাবে অন্য মেয়েদেরও সম্মান করবে। সম্মান করতে না পারলেও অসম্মান করবেনা। তোমার দ্বারা যেনো কোনো মেয়ের ক্ষতি না হয় এটা সবসময় খেয়াল রাখবে।

আমি মনে করি, বাবা মা ই ছেলের আসল বন্ধু হতে পারে। ছেলেকে পরিবার থেকেই নৈতিক শিক্ষা, যৌন শিক্ষা দেওয়া উচিত। পরিবার থেকে যদি একটা ছেলে সবকিছু জানতে পারে, তাহলে বন্ধুদের দ্বারা সে কখনো প্রভাবিত হবেনা।

যে ছেলেকে নৈতিক শিক্ষা, যৌন শিক্ষা দেওয়া হয়নি সেই ছেলেটাই নারী নিয়ে আজেবাজে চিন্তা করবে, ভবিষ্যতে রেপিস্ট হবে। নৈতিক শিক্ষার অভাবেই তো একটা ছেলে রেপিস্ট হয়। তাই নয় কি?

নৈতিক শিক্ষা তথা যৌন শিক্ষা দেওয়া হোক পরিবার থেকেই। প্রতিটা পরিবার যদি এই দায়িত্বটা নেয় তাহলে হয়তো আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কোনো সন্তান রেপিস্ট হবেনা। আমরা ইচ্ছে করলেই রাতারাতি কোনো ধর্ষককে পরিবর্তন করতে পারবোনা, কিন্তু ইচ্ছে করলেই আমাদের সন্তানকে ভবিষ্যতে ধর্ষক হওয়া থেকে বিরত রাখতে পারবো।

ধর্ষণ , পুরুষ ও আমরা[(ধর্ষণ ও সেক্সুয়াল হ্যারাজমেন্ট অপরাধগুলোর প্রকটতা, প্রতিকার ও প্রতিরোধ সম্পর্কে সমাজের সর্বস্তরে সচেতনতা প্রতিষ্ঠা এবং “এক দফা, এক দাবি ধর্ষকের দ্রুত বিচার, দ্রুত ফাঁসি” নিশ্চিতের লক্ষ্যে সামাজিক আন্দোলন “#হোকপ্রতিরোধ”।।
এ আন্দোলনের সোশাল মিডিয়া গ্রুপের পোর্টাল থেকে – stand against Rape – হোক প্রতিরোধ)]

 

 

#হোকপ্রতিরোধ

নৈতিক শিক্ষা
আহনাফ এইচ ফারাবি

আহনাফ এইচ ফারাবি

Related posts

Leave a Comment