আমি ফ্রেন্ডদের থেকে ১ বছর পিছিয়ে গেছি – তারপর ও দিন দিন পিছিয়ে যাচ্ছি।

পড়াশোনা

আমি ফ্রেন্ডদের থেকে ১ বছর পিছিয়ে গেছি – তারপর ও দিন দিন পিছিয়ে যাচ্ছি।

 

স্যার আমি মেডিকেলের ৩য় বর্ষের ছাত্রী। মেডিকেলে ইতিমধ্যেই ১ বছর লস করেছি।

স্যার আমি কোনভাবেই আমার প্রতিদিনের পড়া আইটেম গুলো ক্লিয়ার করতে পারি না।আমি পড়ে যাচ্ছি কিন্তু আমি আইটেম দিতে গিয়ে কিছুই বলতে পারি না,ভুলে যাই।

আমি পড়াশোনা করে গিয়ে পরীক্ষা দিতে গেলে ও ভুলে যাই বলে টিচাররা মনে করে আমি মিথ্যে বলছি, আমি নাকি পড়ে যাইনি।। ইতিমধ্যে আমি ফ্রেন্ডদের থেকে ১ বছর পিছিয়ে গেছি – তারপর ও দিন দিন পিছিয়ে যাচ্ছি। এসব কারনে আমি অনেক ডিপ্রেশন এ-

আমার পড়াশোনা ভাল লাগে না,,
আমার কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে না,সব কিছুতে বিরক্ত, রাগ লাগে,
দিনের পর দিন রাতে ঘুমাতে পারি না,মাঝে মাঝে মনে হয় আমি মরে যাই –

স্যার আমি কি করবো? আমাকে একটু হেল্প করুন স্যার

উত্তর ঃ
তুমি যে সমস্যায় ভুগছো সেটি অনেক ছাত্র ছাত্রীদের ও সমস্যা। বিশেষ করে মেডিকেলের অনেক ছাত্র ছাত্রী এরকম সমস্যায় পড়ে পিছিয়ে যায় এমনকি আত্মহত্যার মতন ভয়াবহ পথ বেছে নেয়।

মনে রাখবে প্রতিটি ছাত্র ছাত্রী পরীক্ষার আগে (তোমার আইটেম পরীক্ষা) চাপে থাকে, টেনশনে ভুগে। এটি সার্বজনীন।

চাপ থাকে বলেই আমরা পড়াশোনা আরো মনোযোগের সঙ্গে করি,আরো সিরিয়াস হয়ে পড়াশোনা করি। একারনে প্রিপারেশন ভাল হয়,রেজাল্ট ও ভাল হয়।

কিন্তু যদি ঐ চাপ মাত্রাতিরিক্ত হয়,টেনশান অতিরিক্ত হয়
তখন আমরা অস্হির হয়ে পড়,
উদ্বেগ বাড়ে,মনোযোগ কমে, যায়,বিভিন্ন শারীরিক লক্ষণ দেখা দেয়,
পরীক্ষার হলে কিছু মনে পড়ে না, সব ভুলে যাই।

অনেকে এ কারনে পরীক্ষা দিতে ভয় পায় ও পরীক্ষা দেয় না( এক্সাম ফোবিয়া)।

এই এক্সাম ফোবিয়া নিয়ে আমার একটি ভিডিও আছে,দেখে নিলে ভাল হবে।

যাই হোক এই যে কম চাপে পড়াশোনা ভাল হয় একে বলা হয় – ফ্যাসিলিটিং

আর বেশি চাপে যে সব গুবলেট হয়ে যায় সেটিকে বলা হয়- ডেবিলিটিটিং পর্যায়।

এই অতিরিক্ত চাপের নানা কারন রয়েছে যা এখানে বলা সম্ভব নয়।

তবে যাদের ইমোশনালিটি বেশি তাদের ব্রেইন চাপের মুখে বেশী উত্তেজিত হয়ে পড়ে।
এরা নেতিবাচক চিন্তা বেশি করে –
প্রিপারেশন ভাল হয়নি,
গ্রেড না জানি কেমন হয়,অন্যরা ভাল করে,আমি পারি না,আমার সক্ষমতা কম ইত্যাদি।
এছাড়া চাপের মুখে তাদের মনোযোগ দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়।
একদিকে পড়াশোনা করতে চায় বেশি বেশি, অন্য দিকে পারবো না,ভুলে যাবো, ফেল করলে সবার কাছে ছোট হয়ে যাবো, ইত্যাদি নানা রকমের কুচিন্তায় মন ভরে থাকে।

একে বলে ডিস্ট্রাকশন থিওরি।

যাই হোক তুমি পড়াশোনাকে ভয় না পেয়ে একে ভালোবাসতে শিখো,
পরীক্ষার রেজাল্ট নিয়ে চিন্তা না করে, জানার জন্য, বোঝার জন্য, আনন্দের জন্য পড়াশোনা করো,হাটতে, ঘুরতে বের হও,কিছু টা বিনোদনে সময় দাও,রিলাক্স হও-
এতো সিরিয়াস হওয়ার কিছু নাই।
অতিরিক্ত চাপ নেবে না,
শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলো,তাদের সহায়তা ও পরামর্শ নাও,
নিজে প্রশ্ন তৈরি করে নিজে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করো,
প্রয়োজনে মাত্র একটি লাইন মনোযোগ দিয়ে পড়ে আবার উচ্চস্বরে তা নিজকে শোনাও,
কারো সঙ্গে নিজকে তুলনা করবে না,
অন্যদের চেয়ে তুমি অনেক মেধাবী না হলেও কারো চেয়ে কম নাও,কেউ তোমার চেয়ে বেশি মেধাবী তেমন ভাবনা বন্ধ করো।
তুমি যেহেতু এখন ডিপ্রেশন এ ভুগছো তোমাকে মনোচিকিৎসক থেকে চিকিৎসা নিতে হবে।
কাউন্সেলিং নিতে হবে ।

কামনা করি তুমি সফল হবে ও বিষন্নতা কাটিয়ে উঠবে

 

পড়াশোনা

প্রফেসর ডা. মো. তাজুল ইসলাম
অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট

 

Photo by Lacie Slezak on Unsplash

Related posts

Leave a Comment